আশিকি টু জামা, বডিগার্ড জামা, কিংবা রা-ওয়ান ড্রেস— বলিউডে যতবারই কোনও হিট ছবি হয়েছে, ততবারই পোশাকে তার প্রভাব পড়েছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ বাহুবলী। পোশাকে রীতিমতো ‘জয় মাহিষমতী’! কাজেই ট্রেন্ডটা নতুন নয়। বলিউডের সঙ্গে পোশাকের একটা হৃদ্যতা চিরকালই।

‘বাহুবলি ২’
এই ঈদে পরতে চান বাহুবলী শাড়ি?
অমরেন্দ্র বাহুবলী আর মহেন্দ্র বাহুবলীর দাপটে থরহরি কম্প গোটা দেশ। রেকর্ডের পর রেকর্ড ভেঙে চলেছে ‘বাহুবলী টু’। তাতে নতুন সংযোজন বাহুবলী স্পেশ্যাল শাড়ি। কেমন দেখতে সেই শাড়ি? শিফনের শাড়ির উপর কোথাও বাহুবলীর ছবি, কোথাও তিরের ছিলা টেনে ধরে আছে বাহুবলী আর দেবসেনা, কোথাও ভল্লালদেব। এমনই শাড়িতে ছেয়ে গিয়েছে গোটা দেশ। গুজরাতের সুরাতে এই শাড়ি প্রথম দিকে বাজার কাঁপাচ্ছিল বটে! এখন কাঁপাচ্ছে কলকাতার নিউ মার্কেট। এখানে বেশ কিছু দোকানে পাওয়া যাচ্ছে বাহুবলী শাড়ি। শুধু শাড়িই নয়, বক্সার কিংবা ট্র্যাকপ্যান্টসও মিলছে! শাড়িতে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার চোখে পড়ছে। কালো-সবুজের মিশেল বা অন্য রকম। কাজেই বালুচরি না চেয়ে বাহুবলী চাইতেই পারেন! নিউ মার্কেটের কিছু ব্যবসায়ী প্রায় আট রকমের বাহুবলী শাড়ি বিক্রি করছেন।

Bahubali Yeh Jawaani Hai Deewani Justin Bieber
বাহা-পাখিদের শাড়ি
শাড়ি-টিশার্টে আটকে নেই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাটে স্টার-প্লাস শাড়িও রমরম করে বিকোয়। তবে সেগুলো ‘ইন্সপায়ার্ড’। অনলাইনে তো হুবহু একই রকম শাড়ি পাওয়া যায়। সেগুলোর দাম অবশ্য নেহাত কম নয়। আর বাংলায় বাহা শাড়ির রমরমা এখনও যে কতটা, যাঁরা এসব নিয়ে চর্চা করেন তাঁরা বিলক্ষণ জানেন। কালার্স বাংলা, স্টার জলসা, জি বাংলার মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত ধারাবাহিকের চেনা চরিত্র পাখি, নন্দিনী, রাশির মতো পোশাকও পাওয়া যায় খুঁজলে। এই ধরনের পোশাকের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশেও। এমনকী, বিভিন্ন ছবি রিলিজ করার সময় সেই ছবির কোনও চরিত্র বা সংলাপ দিয়েও টিশার্ট তৈরি হয়। সেগুলোর বিক্রিও কম না!
ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি
শেষবার নাকি ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’র সময় এ রকমই ‘ক্রেজ’ দেখা গিয়েছিল নিউ মার্কেটে। রণবীর কপূর আর দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ওই ছবির পোস্টার ছেপে গিয়েছিল শাড়িতেও। এক ব্যবসায়ী জানালেন, পুরনো ৫০০ আর ১০০০’এর নোটও নাকি শাড়িতে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। নিউ মার্কেট থেকে নাকি বাংলাদেশেও বাহুবলী শাড়ি পৌঁছে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ঈদের বাজারে সেখানে নাকি ভারতীয় বস্ত্রের রমরমা। যার মধ্যে অনেকটাই বলিউড-ইন্সপায়ার্ড! এর আগে বাংলাদেশে ‘তিসমার খান’, ‘বডিগার্ড’, ‘রা-ওয়ান’ থ্রি-পিসও বিক্রি হয়েছে দেদার।
বিবার-ফিভার
শুধু সিনেমাই কেন! সম্প্রতি জাস্টিন বিবার ঘুরে গেলেন মুম্বইয়ে। তিনি লিপ-সিঙ্ক করে গেলেন, সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু ‘পারপাস ট্যুর’এর সময় রীতিমতো ‘ওনলিফরবিবার’এর লিমিটেড এডিশন কালেকশন লঞ্চ করা হয়েছিল। ইউরোপের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘ওনলি’ লঞ্চ করেছিল ওই কালেকশন। ভারতের ‘ওনলি’ স্টোরগুলোয় ছেয়ে গিয়েছিল বিবার-পোশাক। কোল্ড-শোল্ডার্ড, গ্রাফিক ইনফিউজ্ড টপ উইথ রিপ্ড জিন্স, বিবার-ফেস টিশার্ট— সবকিছু ছিল ওই কালেকশনে।
অমুক শাড়িটা দিন তো
বলিউড ফ্যাশন ব্যাপারটাকে খুবই গুরুত্ব দেয় চিরকাল। তা সে ‘মুঘল-এ-আজম’ হোক কিংবা ‘পাকিজা’। আর বলিউডের সেই পোশাক নকল করার ট্রেন্ডটাও অনেকদিনেরই। তারপর এসেছে একের পর এক ‘গোলিওঁ কি রাসলীলা…রামলীলা’, ‘বাজিরাও মস্তানি’র মতো ছবি। দীপিকা পাড়ুকোনের পরা পোশাকগুলোর মতো করে তৈরি হয়েছে সস্তার পোশাক। সেগুলোও বিক্রি হয়েছে ভালই। শুধু এর মতো-তার মতো ব্যাপারটাই সব নয়। এর বাইরেও এমন কিছু পোশাক বলিউডি ছবিতে দেখা গিয়েছে, যেগুলো ফ্যাশন ট্রেন্ডটাই বদলে দিয়েছে। যেমন নব্বইয়ের দশকের ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’তে কাজলের ম্যাক্সি ড্রেস। ফুল লেংথ স্লিভলেস ম্যাক্সি ড্রেস পেয়ার্ড উইথ ক্রশে টপ! সঙ্গে গিকি গ্লাসেস। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’তে কাজলের শিফন শাড়ি। ডিজাইনার মণীশ মলহোত্র কাজলকে সাজিয়েছিলেন এমন, যে শিফনের ক্রেজ তৈরি হয়েছিল সেই সময়। সঙ্গে আবার লেস ব্লাউজ! ‘হম আপকে হ্যায় কওন’এ মাধুরী দীক্ষিতের পার্পল লেহঙ্গা আর ব্যাকলেস চোলিও সেই সময় ফ্যাশন-ট্রেন্ড বদলে দিয়েছিল। ‘হম দিল দে চুকে সনম’এ ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের (তখন অবশ্য বচ্চন পদবিটা জোড়েনি) ঘাগরাও কাঁপিয়েছে ভারতীয় পোশাকের বাজার। শ্রীদেবীর ‘ইংলিশ ভিংলিশ’এ পরা সুতির শাড়িও নজর কেড়েছিল। বাজারে গিয়ে বললেই হতো, যে অমুক শাড়িটা দিন তো! সেই ধারা অব্যাহত।