অপাঙ্গ
যমুনার পাড়ে বসে
বৃদ্ধ নিতাই ভাবে-
ওরে রাক্ষসী –
আর কত খাবি ?
বাড়িজমি সব খেয়েছিস !
রাতের আঁধারে কেড়ে নিয়েছিস
প্রাণের অম্বলারে ।
জোয়ারের জলে বুকের মানিক
নিয়েছিস সুকৌশলে ,
অপাঙ্গ করে উপহার দিলি
পঙ্গু মেয়েটারে ।
অশিরীরি ছায়া
মনের শিশিতে ভোরের রৌদ্র এসে
জড়িয়ে ধরে
ঘুমন্ত চোখে ঠোঁট রাখে
নতুন বর্ণযুবা ।
প্রকৃতির নববাণে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে
রঙিন বসন্তের অচুম্বিত হৃদয়।
ফাগুনের আকাশ থেকে টুপটাপ
ঝরে পড়ে অদ্ভুত ভালোবাসার বৃষ্টি।
কৃষ্ণচূড়া আর রাধাঁচূড়ার জিহ্বার
আলিঙ্গনে রচিত হয়
প্রেমের যুগল সংগীত।
বিলাসি মনে জেগে ওঠে
অভিনব মিথুন অভিলাষ ।
কাঙ্খিত প্রহরের শেষ প্রান্তে এসে
পথ হারিয়ে ফেলে গভীর অরণ্যে ।
শুরু হয় বেহিসাবি পথচলা ,
এলোমেলো ভাঙামনে খুঁজে পায়
হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা
অবুঝ পাখির উর্ণনাভ জ্বাল ।
কিন্ত কবিতার বিষাদ প্রতিমা এসে
জাপটে ধরে বসন্তের উদোম শরীর।
যদিও স্বরোপিত শৃঙ্খল বন্ধী
করতে পারে না অসীম আত্মা,
তবুও অশিরীরি ছায়া পিপঁড়ের মতোন
কামড় দেয় কড়ে আঙুলে ।
আর্তনাদে কেঁপে ওঠে হৃদয়
অবুঝ বুকে বাজে বিলাপের কান্নাধ্বনি ।
এই বুঝি ফুরিয়ে যাবে নিশাদন্তিকার
সমস্ত দৃশ্যমান আলো ,
মধ্যরাতে কখন যেন জড়িয়ে ধরবে
মৃত্যুর আলিঙ্গন ।
আগাছা
বৈধব্য যুবতীর শুভ্রবসন
পতিহীন তরুণীর ঝলমলে যৌবন
পতিপরিতক্তা নারীর ভরাট শরীর
কুটিল সমাজের চক্ষুশূল ।
নারী তার ছলাক ছলাক জলের
যৌবন নিয়ে
দশজন সুশীলের সামনে হেঁটে বেড়াবে
কূলীন সমাজ তা সইবে কেন ?
নারী তো সমাজের দুর্বলতম অংশ
ভারবাহী বস্তু !
শাপে জর্জরিত তপ্তরশ্মি দৃশ্যমান
সমাজের দর্পণে
কার নিষ্কলুষ মুখে তাপ ছড়ায়
ঠিকরে পড়া শাপদিপ্তী ?
নিয়ম মাফিক সমাজের শিকলে বাঁধা
সকল সুশীলগণ।
তাইতো বৈধব্য , স্বামীপরিতক্তারা
নির্ভরতাবাহি আগাছা
শেকরছিন্ন পরজীবি লতা ।
কষ্টের অক্টোপাশ
নীল কন্টকাকীর্ণ কষ্টগুলো
অনেক যত্ন করে লালন করছি
অন্ধকার ফাটলের গর্ভে ,
সে কারণে হয়তো ওরা
আমার পেছন ছাড়ে না ।।
কষ্টের অক্টোপাশ আমাকে
জাপটে ধরে নিয়ে যায়
বিপন্ন অন্ধকার মহারণ্যে ।।
আর তোমাকেও বলি-
বর্ণিল কষ্ট আর বিচিত্র যন্ত্রণা
নিয়ে কেন দাঁড়ালে
আমার বিষন্ন আঙিনায় ?
উত্তপ্ত সূযের যন্ত্রণাময় গরম ছ্যাকা
তোমারও বুঝি পছন্দ?
আমাকেই খুঁজে পেলে
তোমার বৈচিত্রময় কষ্টের সাথী হতে ?
কেন পুড়ালে কষ্টের আগুনে?
কেন ভাসালে সর্বগ্রাসী অতলান্তে ?