জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মৌটুসী পার্থ। দীর্ঘ সময় ধরে গানের জগতে বিচরণ করছেন। তার গাওয়া বেশ কিছু গান প্রশংসিত হয়েছে শ্রোতামহলে। পাশাপাশি স্টেজ শোতে অন্যরকম গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এ শিল্পীর। দেশের বাইরেও বিভিন্ন দেশে তিনি নিয়মিত শো করছেন। তবে সংগীতে এতটা বছর পারি দেয়ার পরও এতটুকু ক্লান্ত নন মৌটুসী।
বরং নতুন উদ্যমে প্রতিদিন কাজ শুরু করেন। বর্তমানে স্টেজ শো ও নতুন গান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। সব মিলিয়ে কেমন আছেন? মৌটুসী পার্থ বলেন, বেশ ভালো আছি। গান নিয়েই আছি। খুব ভালো কেটে যাচ্ছে সময়।
স্টেজ শো এর অবস্থা কি? মাঝে তো খারাপ ছিলো? মৌটুসী উত্তরে বলেন, হ্যা। মাঝে বন্যা ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বেশ বড় একটা গ্যাপ ছিলো। এই সময়ে স্টেজ শো এর আয়োজন খুব কম হয়েছে। এর সঙ্গে আবার বৃষ্টিও রয়েছে। সব মিলিয়ে অবস্থা ভালো ছিল না। যা এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ধীরে ধীরে হচ্ছে। নভেম্বর থেকে পরিস্থিতিটা আবার ভালো হবে আশা করা যায়। আর আমিতো আসলে খুব সিলেক্টিভ শোগুলোই শুধু করি। তাই এই মূহূর্তে খুব কম শো করছি।

সঙ্গীতশিল্পী মৌটুসী পার্থ (Moutushi Partha)। ছবি : সংগৃহীত
নতুন গানের কি খবর? গানের কাজ কি চলছে? মৌটুসী পার্থ বলেন, নতুন একটি গান তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু সেটায় কন্ঠ দেয়া হয়নি। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছে আরফিন রুমি। অনেক ভালো কাজ করেছে সে। তবে ভয়েস দিতে পারছি না। কোনো সময় আমি ব্যস্ত থাকি আবার কোনো সময় রুমি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই গানটিতে কন্ঠ দেবো। এরপর এটি ভিডিও আকারে প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে।
বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে? মৌটুসী বলেন, ব্যস্ততাতো অবশ্যই গান নিয়ে। বেশ কিছু চ্যানেলের রেকর্ডিংয়ে অংশ নিলাম গত কয়েকদিনে। পাশাপাশি সিলেক্টিভ কয়েকটি শো করেছি। এইতো এভাবেই চলে যাচ্ছে সময়।
এই সময়ে গানের অবস্থাটা কেমন মনে হচ্ছে আপনার কাছে? মৌটুসী বলেন, সময় বদলেছে। মাধ্যম বদলেছে। অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। তবে ফলাফল কিন্তু একই রকম মনে হচ্ছে। আমাদের বাজার ছোট। সীমাবদ্ধতা হচ্ছে বাংলা ভাষা। কারণ বাংলা ভাষার শ্রোতা ইংরেজী কিংবা হিন্দীর চেয়ে কম। এই সময়ে অবস্থা আরও খারাপ বলে মনে হয় আমার কাছে। কারণ আমি নিজেই দেখছি মানুষ এখন বাংলাদেশের কিংবা কলকাতার বাংলা গানও শুনছে না। শুনছে বেশি হিন্দী গান।

সঙ্গীতশিল্পী মৌটুসী পার্থ (Moutushi Partha)। ছবি : সংগৃহীত
হাবিব যখন গান শুরু করল তখন একটা জোয়ার শুরু হয়েছিলো বাংলা গানের। তখন হিন্দী গানের প্রভাবটা কমে গিযেছিলো। কিন্তু এখন আবার হিন্দী গান প্রভাব বিস্তার করছে। এটা একটা অশনি সংকেত। এটা কেন হচ্ছে? মৌটুসী বলেন, আসলে একই ধরনের গান শুনতে শুনতে শ্রোতারা বিরক্ত। হাবিব একটা নতুন ট্রেন্ড নিয়ে এসেছিল। এটা তার কৃতিত্ব। তারপর দেখা গেল যারাই গান করছে সবাই হাবিবকেই অনুসরণ করছে। ভাঙা-গড়ার কোনো খেলা নেই। এই একঘেয়েমিতা থেকে বের হতে হবে। নাহলে আমরা অলরেডি নিজেরাই নিজেদের যে জালে জড়িয়ে গেছি, পরে দেখা যাবে সে জাল থেকে ছুটতেই পারছি না।
ভিন্নধর্মী গানের কথা অনেকেই বলেন। আপনার দৃষ্টিতে একঘেয়েমি গান থেকে কিভাবে বের হয়ে আসা যায়? মৌটুসী আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, একটি কথা বলি তাহলে। সম্প্রতি কিংবদন্তি সুরকার আলম খানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো আমার। সেখানে তরুণ প্রজন্মের একজন আলম খানকে বললেন, আমরাতো এই জেনারেশন কাজ করছি টুকটাক করে। কিন্তু আপনার একেক গান একেক রকম। একটার সঙ্গে অন্যটির কোনই মিল নেই। এই বিষয়টি কিভাবে সম্ভব?
আলম খান বললেন, এটা করতে হলে প্রথমত মিউজিকের প্রতি ফুল ডেডিকেশন দিতে হবে। দ্বিতীয়ত হলো সব কিছু জানা থাকতে হবে মিউজিকের। আর তৃতীয়ত হলো রাগ সংগীত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। আমি আলম খানের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আর একটি কথা, বাংলাদেশে বসে আমি যতোই ওয়েস্টার্ন মিউজিক করি না কেন আমি তার মাধ্যমে কিন্তু বৃহৎ জনগোষ্ঠির কাছে পৌছাতে পারব না। তাই এদেশে ওয়েস্টার্ন নয় বাংলা স্টাইলেই গান করতে হবে।