সোনাপুকুর শুকিয়ে গেছে। কাজল বিলের পানি কমে গেছে। মাঠেঘাটে কোথাও কোনো পানি নেই। পাখিদের কলকাকলী থেমে গেছে। গাছেদের সবুজ পাতা ঝরে গেছে।
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নেচে নেচে গান গেয়ে বেড়ায়।
‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই’
বৃষ্টি আসে না। শুকিয়ে যায় কচি কচি ঘাস। গাছেরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, বৃষ্টি তুমি ঝরো। আমরা আবার জেগে উঠি।
পাখিরা আকাশে উড়ে উড়ে বলে, বৃষ্টি তুমি কোথায়? সোনাপুকুর কানায় কানায় ভরে উঠুক। কাজল বিল ছলছল করে ঢেউ ছড়াক। মাথাভাঙা নদী আবার তিরতির করে বয়ে চলুক। কিন্তু বৃষ্টি আসে না।
মেঘের দেশের মেঘপরি ঘুমিয়ে আছে। তাই বৃষ্টি নামে না। এসব দেখে ছোট্ট মেয়ে মিলির কান্না পায়। তার বাগানের ফুলগাছ সব শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।
সূর্যমুখি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, মিলিসোনা, পানি দাও আমার গায়ে।
হলুদগাঁদা বলে, মিলিসোনা, আমাদের কি আর পানি দেবে না?
সবাই শুধু পানি চায়। মিলির তাই কান্না পায়। ও গাছেদের বলে, আমি কি করে তোমাদের পানি দেব বল? কোথাও যে একফোঁটা পানি নেই। বৃষ্টি যে নামে না, অনেক অনেকদিন ধরে।
২.
একদিন মিলি আকাশের দিকে করুণ নয়নে তাকায়। তারপর বলে, ওগো মেঘের দেশের মেঘপরি, আমার কথা একটু শোনো। মিলির কথাগুলো বাতাসে ভাসতে ভাসতে মেঘের দেশে চলে যায়।
মিলি মেঘপরিকে কাছে ডাকে। সে বলে, মেঘপরি, আমাদের পৃথিবীটা শুকিয়ে গেছে। বৃষ্টি আসে না অ…নে…ক দিন। এবার তুমি একটু ঝরো! মেঘপরি তবুও শুনতে পায় না মিলির কথা।
মিলি এবার কেঁদে কেঁদে বলে, মেঘপরি তুমি এতো নিষ্ঠুর কেন? আমরা সবাই কেঁদে কেঁদে বৃষ্টি চাইছি। তুমি কিছুতেই শুনছ না। ছোট্ট মেয়ে মিলির কান্নার শব্দে এবার মেঘপরির ঘুম ভাঙে।
মেঘপরির দয়া হয়। আহা, মানুষদের কি দুঃখ। পাখিদের কি কষ্ট। গাছেরা মরে যাচ্ছে। কচিকচি ঘাসেরা শুকিয়ে যাচ্ছে। বিলের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। মাথাভাঙা নদী মরে যাচ্ছে। সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি কখন আসবে!
মেঘপরির তখন ভীষণ কান্না পেল। সে হু হু করে কাঁদতে লাগল। কান্নার ফোঁটাগুলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়ে ঝরল। বৃষ্টি এলো গাছের পাতায়। নদীর বুকে। মাটির বুকে।
ছোট্ট মেয়ে মিলি খুশিতে নাচতে লাগল। সে বলল, সবাই দেখ দেখ, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমেছে। মেঘপরি আমার কথা শুনেছে।
পৃথিবীর মানুষরা খুশিতে নাচতে লাগল। মাঠ ভিজল। ঘাট ভিজল। সোনাপুকুর ভরে গেল কানায় কানায়। কাজল বিলে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ উঠল। তিরতিরিয়ে বয়ে চলল মাথাভাঙা নদী।
ছোট্ট মেয়ে মিলি কি করল জানো? ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝে সে ভিজতে ভিজতে বাগানে গেল। তার প্রিয় ফুলগাছদের সে অনেক আদর করল। গাছেদের বলল, এখন তোমাদের কেমন লাগছে শুনি?
গাছেরা ভিজতে ভিজতে বলল, কী মজা! কী মজা!
৩.
ধূসর পৃথিবী আবার প্রাণ ফিরে পেল। পাখিরা গান গাইল। কচিকচি ঘাসেরা সবুজ হলো। নদী-বিল-পুকুরে ঢেউ বয়ে গেল।